
হ্যারি পটার সিরিজে আসছে লেডি ভল্ডেমর্ট? জাপানেও উন্মোচিত হলো জাদুর নতুন ঠিকানা
হ্যারি পটার বিশ্বজুড়ে ভক্তদের জন্য একের পর এক নতুন খবর নিয়ে আসছে। একদিকে যেমন এইচবিও ম্যাক্স (HBO Max)-এর আসন্ন রিবুট সিরিজে বড় ধরনের পরিবর্তনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, তেমনই জাপানে জাদুকরী জগতের একটি নতুন দরজা খুলে গেছে ভক্তদের জন্য। সবচেয়ে বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে লর্ড ভল্ডেমর্টের চরিত্রে সম্ভাব্য লিঙ্গ পরিবর্তন।
ভল্ডেমর্ট চরিত্রে নারী অভিনেত্রী?
হ্যারি পটার সিরিজের রিবুট নিয়ে কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই ভক্তদের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। জে.কে. রাউলিং-এর বইয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি এই সিরিজটি আরও বিস্তারিত এবং বইয়ের প্রতি বিশ্বস্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি এক নতুন গুঞ্জন পুরো জাদুকরী বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, সিরিজের অন্যতম প্রধান খলনায়ক, লর্ড ভল্ডেমর্টের চরিত্রে একজন নারী অভিনেত্রীকে দেখা যেতে পারে।
বিখ্যাত স্কুপার ড্যানিয়েল রিচম্যানের মতে, “হ্যারি পটার সিরিজের জন্য ভল্ডেমর্টের চরিত্রে পুরুষ ও মহিলা উভয়কেই অডিশনের জন্য ডাকা হচ্ছে, তাই আমরা সিরিজে একজন নারী ভল্ডেমর্ট দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” যদি এই খবর সত্যি হয়, তবে এটি হবে হ্যারি পটার জগতের ঐতিহ্যের একটি আমূল পরিবর্তন। “হি-হু-মাস্ট-নট-বি-নেমড” সেক্ষেত্রে “শি-হু-মাস্ট-নট-বি-নেমড”-এ পরিণত হতে পারে। মূল চলচ্চিত্রে ভল্ডেমর্টকে চতুর্থ সিনেমা, ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য গবলেট অফ ফায়ার’-এ প্রথমবার পর্দায় দেখা গেলেও, নতুন এই সিরিজে প্রথম সিজন থেকেই তার উপস্থিতির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
ঐতিহ্য বনাম নতুনত্বের বিতর্ক
হ্যারি পটার চলচ্চিত্রে র্যালফ ফাইন্সের (Ralph Fiennes) লর্ড ভল্ডেমর্টের চরিত্রায়ন এতটাই আইকনিক যে তার জায়গা নেওয়া যেকোনো অভিনেতার জন্যই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নির্মাতারা সম্ভবত সেই সরাসরি তুলনা এড়ানোর জন্যই এমন যুগান্তকারী পরিবর্তনের কথা ভাবছেন। তবে এই ধরনের পরিবর্তন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। সম্প্রতি গ্রেটা গারউইগের ‘দ্য ক্রনিকলস অফ নার্নিয়া’ চলচ্চিত্রে সিংহ আসলানের চরিত্রে মেরিল স্ট্রিপের মতো একজন নারী অভিনেত্রীর কণ্ঠ দেওয়ার খবরে যেমন আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল, এক্ষেত্রেও তেমনটা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে এই পরিবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবেও দেখার সুযোগ রয়েছে। একজন নারী ভল্ডেমর্ট এই চরিত্রটিকে নতুন একটি দৃষ্টিকোণ দিতে পারে এবং এইচবিও-র সিরিজটিকে শুধুমাত্র পুরোনো সিনেমার অনুকরণ হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। এদিকে, ‘ওপেনহাইমার’ খ্যাত অভিনেতা কিলিয়ান মারফিকে এই চরিত্রের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “র্যালফ ফাইন্সের মতো একজন কিংবদন্তী অভিনেতার করা চরিত্রে অন্য কারো অভিনয় করা সত্যিই কঠিন। যেই এই চরিত্রটি করুক, তার জন্য শুভকামনা।”
কে এই লর্ড ভল্ডেমর্ট?
লর্ড ভল্ডেমর্ট, যার আসল নাম টম মারভোলো রিডল, জাদুকরী বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কালো জাদুকর। মাগল অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া রিডল হগওয়ার্টসে একজন মেধাবী ছাত্র ছিল। কিন্তু অমরত্ব এবং ক্ষমতা দখলের নেশা তাকে অন্ধকারের পথে চালিত করে। সে তার আত্মাকে টুকরো করে হরক্রাক্স (Horcrux) তৈরি করে অমরত্ব অর্জনের চেষ্টা করে এবং ডেথ ইটারদের (Death Eaters) নেতৃত্ব দিয়ে জাদুকরী বিশ্বে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। শিশু হ্যারি পটারকে হত্যা করার তার প্রচেষ্টা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে এবং সে নিজের শরীর হারায়। বহু বছর পর পুনরুত্থানের মাধ্যমে সে আবার ক্ষমতা দখলের লড়াই শুরু করে, যার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে হ্যারি পটারের সাথে তার শেষ যুদ্ধে।
জাপানে হ্যারি পটারের জাদুকরী জগৎ
একদিকে যখন আসন্ন সিরিজ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা তুঙ্গে, অন্যদিকে জাপানের টোকিওতে হ্যারি পটার ভক্তদের জন্য একটি স্থায়ী ঠিকানা তৈরি হয়েছে। হারাজুকুতে সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে একটি বিশাল হ্যারি পটার স্টোর। ফ্র্যাঞ্চাইজির অন্যতম অভিনেতা টম ফেলটন (ড্রেকো ম্যালফয়) এই দোকানটির উদ্বোধন করেন। জাপানে হ্যারি পটারের জনপ্রিয়তা আগে থেকেই আকাশচুম্বী, যার প্রমাণ টোকিওর ‘দ্য মেকিং অফ হ্যারি পটার’ স্টুডিও ট্যুর এবং ওসাকার ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে অবস্থিত ‘দ্য উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ড অফ হ্যারি পটার’।
শুধু দোকান নয়, এক জাদুকরী অভিজ্ঞতা
৯০০ বর্গমিটারের এই বিশাল দোকানটি দুটি তলায় বিভক্ত। এটি শুধুমাত্র একটি দোকান নয়, বরং ভক্তদের জন্য একটি জাদুকরী অভিজ্ঞতা।
-
প্রথম তলা: এখানে কেনাকাটার জন্য রয়েছে বিশাল আয়োজন। হগওয়ার্টসের চারটি হাউসের (গ্রিফিন্ডর, স্লিদারিন, হাফলপাফ, র্যাভেনক্ল) রঙের টি-শার্ট, মগ, জাদুর কাঠি থেকে শুরু করে এমন অনেক পণ্য রয়েছে যা শুধুমাত্র হারাজুকুর এই দোকানেই পাওয়া যাবে। এছাড়াও, নিষিদ্ধ বন বা ‘ফরবিডেন ফরেস্ট’-এর থিমে একটি বিশেষ স্থান তৈরি করা হয়েছে যেখানে হিপোগ্রিফের একটি বিশাল প্রতিরূপ রাখা হয়েছে।
-
দ্বিতীয় তলা: এই তলাটি মূলত জাদুকরী খাবার ও পোশাকের জন্য। এখানে চকোলেট ফ্রগস, বিভিন্ন স্বাদের বিনস এবং অন্যান্য জাদুকরী মিষ্টি পাওয়া যায়। এর পাশেই রয়েছে হগওয়ার্টসের পোশাক ও জাদুর কাঠির বিশাল সংগ্রহ।
এছাড়াও, এখানে একটি ‘বাটারবিয়ার বার’ রয়েছে, যেখানে ভক্তরা তাদের প্রিয় পানীয় বাটারবিয়ার, এমনকি বাটারবিয়ার ফ্লেভারের পিৎজা ও আইসক্রিমও উপভোগ করতে পারবেন। সব মিলিয়ে, এই নতুন উদ্যোগগুলো প্রমাণ করে যে হ্যারি পটারের জাদু এখনও বিশ্বজুড়ে ভক্তদের মুগ্ধ করে চলেছে।