বাংলাদেশের জারবেরা চাষে নতুন সম্ভাবনা

বাংলাদেশের ফুলচাষীরা এখন স্বস্তি পাচ্ছেন। লাল, সাদা, হলুদ, গোলাপি, ম্যাজেন্ডা ও কমলা রঙের জারবেরা ফুলগুলো পলিথিনের ছাউনির নিচে ফুটে আছে। এই সুন্দর ফুলগুলোকে ঘিরে চাষীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে, কারণ এতদিন তারা ভারত থেকে অবৈধ পথে এই ফুলের চারা আনতেন। তবে এখন সেই চারাগুলো দেশেই টিস্যু কালচারের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে।

জারবেরা ফুলটি সূর্যমুখী পরিবারের একটি জনপ্রিয় সদস্য। উইকিপিডিয়া অনুযায়ী, এটি জার্মান উদ্ভিদবিজ্ঞানী ট্রাউগট গেরবারের নামে নামকরণ করা হয়েছে। আফ্রিকান ডেইজি নামেও পরিচিত এই ফুলটির প্রায় ৩০টি প্রজাতি রয়েছে, যেগুলো দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়াজুড়ে বিস্তৃত। জারবেরা পৃথিবীব্যাপী কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বহুল পরিচিত ও জনপ্রিয়।

জারবেরা ফুলের গাছের পাতা পালং শাকের মতো এবং ফুলগুলো সূর্যমুখীর মতো দেখতে। দেশের বিভিন্ন রঙের জারবেরা ফুল সারা বছর ধরে ফুটে থাকে, বিশেষ করে যশোরের গদখালীতে ২০০৮ সাল থেকে অন্যান্য ফুলের সঙ্গে এই ফুলের চাষ শুরু হয়। চাষীরা প্রথমে ভারত থেকে চোরাপথে এই ফুলের চারা আনতেন, তবে এখন টিস্যু কালচারের মাধ্যমে নিজ দেশে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে।

এই ফুলের বীজ থেকে নতুন চারা জন্মায় না, বরং সাকার উৎপাদনের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করা হয়। মাতৃগাছ থেকে বারবার চারা উৎপাদন করলে এর গুণগতমান ও উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। তাই চারা উৎপাদনের জন্য টিস্যু কালচার ব্যবহার করা হয়, যা অধিক চারার উৎপাদন ও জীবাণুমুক্ত চারা সরবরাহে কার্যকর। একবার চারা রোপণ করলে বহু বছর ধরে ফুল পাওয়া যায়, তবে বাণিজ্যিক চাষের জন্য বছরে একবার নতুন চারা রোপণ করা উত্তম।

প্রতিটি জারবেরা গাছ থেকে বছরে প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি ফুল পাওয়া যায়। চারা রোপণের ৬০ দিনের মধ্যেই ফুল ফোটে, এবং এই ফুলের স্থায়িত্ব গাছ থেকে তুলে ৮ থেকে ১৫ দিন এবং গাছে ৩০ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত থাকে। ফলে বাসাবাড়িতে এ ফুলের চাহিদা ব্যাপক।

জানা গেছে, সোয়া দুই কাঠা জমিতে জারবেরা ফুল চাষে খরচ হয় প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা, যেখানে প্রথম বছরে ফুল বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ২ লাখ টাকার উপার্জন হয়। দ্বিতীয় বছরে খরচ আরও কম হয়, ফলে ফুল চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হতে পারবেন।