
আরিয়ান খানের ‘দ্য বাস্টার্ডস অফ বলিউড’-এর প্রিমিয়ার: কাজলের প্রতিক্রিয়া এবং শো-এর গভীর বিশ্লেষণ
শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানের পরিচালনায় প্রথম ওয়েব সিরিজ ‘দ্য বাস্টার্ডস অফ বলিউড’-এর জমকালো প্রিমিয়ারে বসেছিল চাঁদের হাট। ইন্ডাস্ট্রির বহু তারকার পাশাপাশি সেখানে উপস্থিত ছিলেন শাহরুখের ঘনিষ্ঠ বন্ধু কাজল। তিনি আরিয়ানের সবচেয়ে বড় চিয়ারলিডার হিসেবে হাজির হয়েছিলেন, তবে শো-এর নাম শুনে তার বিস্ময় লুকাতে পারেননি।
শো-এর নাম নিয়ে কাজল-শাহরুখের মজাদার কথোপকথন
বুধবার মুম্বাইতে অনুষ্ঠিত এই প্রিমিয়ারে কাজল তার স্বামী অজয় দেবগনের সাথে যোগ দেন। বৃহস্পতিবার নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে প্রিমিয়ারের কিছু বিশেষ মুহূর্ত শেয়ার করেন তিনি। ছবিগুলির মধ্যে ছিল শাহরুখ খান ও আরিয়ানের সঙ্গে একটি মিষ্টি সেলফি, অজয়ের সঙ্গে রেড কার্পেটের পোজ এবং গৌরী খান ও আরিয়ানের সঙ্গে একটি সুন্দর ছবি। ছবির ক্যাপশনে কাজল লেখেন, “‘দ্য বাস্টার্ডস অফ বলিউড’-এর সঙ্গে 😉 অভিনন্দন আরিয়ান… আমি নিশ্চিত, তোমার শো আরও অসাধারণ হবে! ভীষণ উত্তেজিত…”
এর পাশাপাশি কাজল একটি মজাদার ভিডিও শেয়ার করেন, যেখানে শাহরুখ ও অজয়ের উপস্থিতিতে তাকে শো-এর নামটি জোরে বলতে বলা হয়। উত্তরে কাজল হেসে বলেন, “আমি বলতে পারব না,” এবং মজা করে শো-এর নাম বলেন “দ্য বিপ বিপ অফ বলিউড”। এরপরই তিনি হাসিতে ফেটে পড়েন। কাজল অবাক হয়ে শাহরুখকে জিজ্ঞেস করেন, “সবকিছুই কি বিপ বিপ?” উত্তরে শাহরুখ হেসে বলেন, “হ্যাঁ, সবকিছুই বিপ বিপ… শো-এর বেশিরভাগটাই বিপ বিপ।” পুরো সময়টাতেই অজয় দেবগনকে মৃদু হাসতে দেখা যায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় ও শো-এর খুঁটিনাটি
এই মুহূর্তটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় এবং ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’-এর এই আইকনিক জুটিকে একসঙ্গে এভাবে মজা করতে দেখে ভক্তরা উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন। একজন অনুরাগী লেখেন, “এটাই আসল বন্ধুত্ব,” অন্য একজন লেখেন, “অবশেষে রাজা তার রানির সঙ্গে।”
আরিয়ান খান এই সিরিজের মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে বলিউডে পা রাখলেন। ১৮ই সেপ্টেম্বর Netflix-এ মুক্তি পেয়েছে সাত পর্বের এই সিরিজ, যার চিত্রনাট্যও আরিয়ানের লেখা। রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে নির্মিত এই সিরিজে অভিনয় করেছেন লক্ষ্য, সাহের বাম্বা, ববি দেওল, মনোজ পাহওয়া, মোনা সিং, মণীশ চৌধুরী, রাঘব জুয়াল, অন্য সিং এবং গৌতমী কাপুরের মতো শিল্পীরা। এতে আমির খান, সালমান খান, রণবীর সিং এবং স্বয়ং শাহরুখ খানের মতো তারকাদের বিশেষ ক্যামিও রয়েছে।
বলিউডের অন্দরের গল্প: এক অন্য ধারার ওয়েব সিরিজ
আরিয়ান খানের প্রথম পরিচালনা ‘দ্য বাস্টার্ডস অফ বলিউড’ বলিউডকে ফাঁস করার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়নি, বরং এটি চলচ্চিত্র জগতের ভেতরের পাগলামি এবং বিশৃঙ্খলার প্রতি একটি প্রেমপত্র। আরিয়ানের বুদ্ধিদীপ্ত লেখা, তারকাদের ক্যামিও এবং মজাদার উপস্থাপনার মাধ্যমে এই Netflix শো-টি বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। শো-এর টিজার মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই দর্শকের মনে প্রশ্ন ছিল, এর আসল নাম কী? ‘দ্য বাস্টার্ডস অফ বলিউড’ নাকি অন্য কিছু? এই রহস্যের উত্তর লুকিয়ে রয়েছে সিরিজের শেষ পর্বে, যা দর্শকদের চমকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
যে কেউ, যিনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত, তিনি জানেন যে বলিউডের ভেতরের খবর জানার জন্য সাধারণ মানুষের কৌতূহল কতটা প্রবল। আরিয়ান খান এই শো-এর মাধ্যমে দর্শকদের সেই জগতের ভেতরে নিয়ে যান, যার কথা তারা এতদিন ম্যাগাজিন বা গসিপ কলামে পড়ে এসেছেন। তবে আরিয়ান কোনো মিথ ভাঙতে আসেননি, বরং তিনি বলিউডের এই хаос-কে উদযাপন করেছেন।
আরিয়ানের বুদ্ধিদীপ্ত লেখনী ও সেল্ফ-অ্যাওয়ারনেস
এই শো-এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর সেল্ফ-অ্যাওয়ারনেস এবং বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতা (বাবার জিন ভালোভাবেই পেয়েছেন)। সিরিজের প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যেই নেপোটিজম নিয়ে একটি জোক রয়েছে। এমনকি গল্পের শেষে বলিউডের মাদক-বিরোধী অভিযানের দিকেও হালকা ইঙ্গিত করা হয়েছে, তবে সবকিছুই অত্যন্ত রুচিশীলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আরিয়ান তার চরিত্র, ইন্ডাস্ট্রি বা নিজের জন্য দর্শকের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করেননি। এমনকি তিনি নিজের স্বল্প হাসির বিষয় নিয়েও একটি জোক লিখেছেন।
গসিপ থেকে বক্স অফিস: বলিউডের সব মশলা এক জায়গায়
‘দ্য বাস্টার্ডস অফ বলিউড’-এর রসিকতাপূর্ণ সুর একে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এটি এমন একটি অনুভূতি দেয়, যেন আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে পপকর্ন হাতে বসে বলিউডের গসিপ করছেন। ভক্তদের উন্মাদনা, জনসংযোগের নাটক, নকল বন্ধুত্ব, কাউকে সরিয়ে নিজে জায়গা করে নেওয়ার রাজনীতি, প্লাস্টিক সার্জারি, গোপন সম্পর্ক, বক্স অফিসের সাফল্য ও ব্যর্থতা, অ্যাওয়ার্ড শো-এর নাটক এবং আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগসাজশ – গল্পের অগ্রগতির সাথে সাথে সবকিছু আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
অভিনয়ে কারা কাড়লেন নজর
লক্ষ্য এই সিরিজে তার ক্যারিয়ারের একটি স্বপ্নের চরিত্র পেয়েছেন এবং তিনি প্রমাণ করেছেন যে তাকে এই ভূমিকার জন্য বেছে নেওয়া ভুল ছিল না। তার বলিষ্ঠ কণ্ঠ এবং ‘গুড বয়’ লুক তাকে অতিরিক্ত সুবিধা দিয়েছে। তারকা-সন্তানের ভূমিকায় সাহের বাম্বা প্রতিশ্রুতি দেখালেও, অন্যান্য দুর্দান্ত অভিনয়ের ভিড়ে তিনি কিছুটা ঢাকা পড়ে গেছেন। ববি দেওল তার স্টারডম এবং ক্যারিশমা দিয়ে পর্দায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। ক্লাইম্যাক্সে তার ‘সিটি-মার’ এন্ট্রি তার ক্যারিয়ারের প্রত্যাবর্তনের প্রতীক। মনোজ পাহওয়া, রাঘব জুয়াল, মোনা সিং এবং মণীশ চৌধুরীর মতো অভিনেতারা এতটাই অনবদ্য যে মনে হয়, তাদের মতো প্রতিভাবান শিল্পীদের জন্য আরও ভালো চরিত্র লেখা উচিত।
চরিত্রদের মানবিক দিক এবং শো-এর সাফল্য
এই শো-এর একটি বড় শক্তি হলো এটি তার চরিত্রদের মানবিক দিকটি তুলে ধরেছে, যা দর্শকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে। এই কারণেই রজত বেদীর অভিনীত জরাজ সাক্সেনার চরিত্রটি দর্শকদের মনের গভীরে দাগ কাটে। এক সময়ের তারকাখ্যাতি এবং তারপর প্রায়-বিস্মৃত হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা অনেক অভিনেতার বাস্তব জীবনের প্রতিফলন। যখন সে তার প্রাপ্য সম্মান ফিরে পায়, তখন দর্শক হিসেবে আবেগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। শো-টি সিনেমার জগতের সেই অবাস্তব, लार्जर-দ্যান-লাইফ চরিত্রগুলো থেকে বেরিয়ে এসে এক সতেজ এবং বাস্তবসম্মত গল্প বলেছে, যা এর সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ।