সপ্তর্ষি মৌলিকের অভিনয় যাত্রা ও ব্যক্তিজীবনের কথা
সপ্তর্ষি মৌলিক একজন প্রতিভাবান অভিনেতা, যিনি নাটকের জগতে বেশ পরিচিত মুখ। মঞ্চে তাঁর সাবলীল অভিনয় দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে বহুবার। তবে এবার তিনি টেলিভিশনে পা রাখছেন ‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’ সিরিয়ালের মাধ্যমে, যা সম্প্রচারিত হবে আগামী রবিবার। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্তের স্বামী। অভিনয় জীবন ও ব্যক্তিগত জীবন— দুই মিলিয়ে তাঁর জার্নি বেশ আকর্ষণীয়।
প্রথম টেলিভিশন কাজটি বেছে নেওয়ার কারণ
এই প্রকল্পটি বেছে নেওয়ার পিছনে রয়েছে এক সুন্দর গল্প। সপ্তর্ষির নিজস্ব থিয়েটার গ্রুপ ‘পাঞ্চজন্য’-তে তিনি কৃষ্ণের চরিত্রে অভিনয় করেন। প্রখ্যাত পরিচালক রাজ চক্রবর্তী একদিন সেটি দেখতে যান এবং তাঁর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে, একটি অনুষ্ঠানে রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে আবার দেখা হয় এবং সেখানেও দু’জনের মধ্যে কথা হয়। পরে, একদিন পরিচালক তাঁকে অফিসে ডাকেন এবং বলেন, ‘‘একটি চরিত্র আছে, তুমি করতে পারবে কি না?’’ সেই ভাবেই শুরু হয় এই যাত্রা।
রাজ চক্রবর্তীর প্রস্তাবে রাজি হওয়ার কারণ
রাজ চক্রবর্তীর মতো একজন গুণী পরিচালকের কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়াই ছিল বড় ব্যাপার। তবে শুধুমাত্র পরিচালক বলেছিলেন বলেই নয়, স্ক্রিপ্টটিও বেশ ভালো লেগেছিল সপ্তর্ষির। তাঁর মতে, গল্পটি খুবই বিনোদনমূলক এবং একই সঙ্গে গভীর অর্থ বহন করে। এটি হাস্যরসাত্মকভাবে লেখা হলেও এতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা রয়েছে।
থিয়েটার ও সিনেমার মধ্যে পার্থক্য
থিয়েটার ও সিনেমার মধ্যে পার্থক্য প্রসঙ্গে সপ্তর্ষি বলেন, ‘‘থিয়েটারে অনেক দীর্ঘ প্রস্তুতি নেওয়া যায়, একেকটি নাটকের জন্য দুই বছর ধরে রিহার্সাল করা হয়। কিন্তু সিনেমা বা টেলিভিশনে সে সুযোগ থাকে না। তবে আমি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসি। আমার মনে হয়, একজন অভিনেতা হিসেবে বিভিন্ন ধরণের চরিত্রে অভিনয় করাই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘রণবীর সিং যেমন ‘সিম্বা’র পাশাপাশি ‘গাল্লি বয়’-এ অভিনয় করেছেন, আমিও চাই বিভিন্ন চরিত্রে কাজ করতে। এটি আমার অভিনয় দক্ষতাকে আরও পরিণত করবে।’’
সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক
নাটকে কাজ করার সময় সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে রিহার্সাল করার সুযোগ থাকে, কিন্তু টেলিভিশন বা সিনেমায় সেটি খুব কমই সম্ভব হয়। তবে সপ্তর্ষি মনে করেন, সহ-অভিনেতা সৌরভের সঙ্গে তাঁর অসাধারণ বোঝাপড়া হয়েছে। প্রথম দিনেই তিনি সৌরভকে বলেন, ‘‘চলো, ১০ মিনিট আড্ডা দিই।’’ এই আড্ডার মাধ্যমেই তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তিনি বিশ্বাস করেন, এই সম্পর্ক দর্শকদের মন ছুঁয়ে যাবে।
অভিনয়ের পথচলা ও ব্যক্তিজীবন
সপ্তর্ষির অভিনয় জীবনের শুরুটা একেবারেই পরিকল্পিত ছিল না। তাঁর পরিবারে পড়াশোনার একটি জোরালো পরিবেশ ছিল। বাবা অ্যাপ্লায়েড ম্যাথামেটিক্সে কাজ করতেন এবং মা শান্তিনিকেতনের কলাভবন থেকে পাশ করেছিলেন। মা একটি বুটিক চালাতেন এবং নিজের হাতে ডিজাইন করতেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি দেখেছেন মা কর্মজীবী নারী, আর বাবা কেন্দ্রীয় সরকারের একজন সিনিয়র অডিটর।
স্কুলজীবনে সপ্তর্ষি ছিলেন এক জন গড়পড়তা ছাত্র। বারো পর্যন্ত পড়াশোনায় তেমন সমস্যা ছিল না, তবে পরবর্তী সময়ে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কিছুটা কমে যায়। তবে তাঁর পরিবার কখনোই তাঁকে নির্দিষ্ট বিষয়ে পড়তে বাধ্য করেনি। তিনি ধীরে ধীরে থিয়েটারের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং সেখান থেকেই অভিনয় শুরু করেন।
অভিনয়ের প্রতি ভালবাসা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সপ্তর্ষি শুধু অভিনয়ই করেন না, কবিতা লেখেন এবং র্যাপ গানও তৈরি করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি চিত্রনাট্য লিখতেও ভালোবাসেন। তাঁর মতে, একজন শিল্পীকে সবসময় নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করতে হবে।
এখন তিনি টেলিভিশনে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছেন, যা তাঁর ক্যারিয়ারের একটি নতুন অধ্যায়। তিনি মনে করেন, এই কাজের মাধ্যমে তিনি নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারবেন এবং নতুন কিছু শিখতে পারবেন।
সপ্তর্ষির এই যাত্রা শুধু একজন অভিনেতার নয়, বরং একজন শিল্পীর আত্ম-অন্বেষণের গল্পও। অভিনয়ের পাশাপাশি জীবনের নানা অভিজ্ঞতা তাঁকে নতুন কিছু শিখিয়েছে এবং তিনি এই পথচলাকে উপভোগ করছেন।