Breaking
24 আগস্ট 2025, রবি

বক্স অফিসে লোকেশ কানাগরাজের দুই মেগাহিট: ‘লিও’-কে ছাড়িয়ে যেতে পারল কি ‘কুলি’?

লোকেশ কানাগরাজ বর্তমানে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় পরিচালক। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া রজনীকান্ত অভিনীত তার সিনেমা ‘কুলি’ বিশ্বজুড়ে প্রেক্ষাগৃহে ঝড় তুলেছে। মুক্তির পর থেকেই ‘কুলি’-এর সঙ্গে লোকেশের আগের সিনেমা, থালাপথি বিজয় অভিনীত ‘লিও’-এর তুলনা চলছে। রজনীকান্তের সিনেমাটি মুক্তির পর প্রথম সপ্তাহান্ত (৪ দিন) পার করেছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, চার দিনের বক্স অফিস আয়ের হিসাবে ‘লিও’ এবং ‘কুলি’-এর মধ্যে কে এগিয়ে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে সপ্তাহান্তের আয়ে এগিয়ে ‘লিও’

বক্স অফিস ট্র্যাকার কমস্কোর-এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মুক্তির প্রথম চার দিনে বিশ্বব্যাপী আয়ের ক্ষেত্রে বিজয় অভিনীত ‘লিও’ এবং রজনীকান্তের ‘কুলি’-এর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা গেছে। ভক্তদের বিপুল প্রত্যাশা এবং প্রথম দিনের উত্তেজনা আয়ের পরিসংখ্যানে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। এই লড়াইয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে ‘লিও’। মুক্তির প্রথম চার দিনে ‘লিও’ বিশ্বব্যাপী আয় করেছে $48.54 মিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪০৩.৫০ কোটি রুপি), অন্যদিকে ‘কুলি’ আয় করেছে $45.34 মিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৯৭.৫ কোটি রুপি)। এর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, তামিল সিনেমার এই দুই মহাতারকার সিনেমা বিশ্বজুড়ে দর্শকদের কতটা আকৃষ্ট করেছে, এবং এই দুটি সিনেমার পেছনের মূল চালিকাশক্তি হলেন পরিচালক লোকেশ কানাগরাজ।

সাফল্যের পেছনের কারণ ও তারকাদের প্রভাব

তবে একটি বিষয় মনে রাখা দরকার যে, ‘লিও’ তামিলনাড়ুসহ অন্যান্য জায়গায় এককভাবে মুক্তি পেয়েছিল। অন্যদিকে, ‘কুলি’-কে বক্স অফিসে হৃতিক রোশন এবং জুনিয়র এনটিআর অভিনীত ‘ওয়ার ২’-এর মতো বড় সিনেমার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হয়েছে। তবে ‘কুলি’-এর একটি বড় সুবিধা ছিল এর প্যান-ইন্ডিয়ান তারকা সমাহার। আমির খান, নাগার্জুনা আক্কিনেনি, উপেন্দ্র এবং সৌবিন শাহিরের মতো তারকারা বিভিন্ন অঞ্চলের দর্শকদের আকর্ষণ করতে সহায়তা করেছেন। পক্ষান্তরে, ‘লিও’ সিনেমায় মূল আকর্ষণ ছিলেন শুধুমাত্র থালাপথি বিজয়। সব মিলিয়ে, সমালোচক এবং ভক্তদের কাছ থেকে দুটি সিনেমাই প্রায় একই ধরনের প্রতিক্রিয়া পেয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে ‘কুলি’-এর চূড়ান্ত বক্স অফিস আয় ‘লিও’-এর কাছাকাছিই থাকবে।

‘কুলি’: শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রামের গল্প

রজনীকান্ত অভিনীত ‘কুলি’ সিনেমাটির গল্প শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রাম এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাদের রুখে দাঁড়ানোর কাহিনীকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে। সিনেমার নায়ক, যিনি একজন কুলি হিসেবে কাজ করেন, তিনি তার জনগণের অধিকার রক্ষা করতে এবং শোষণকারী বড় কর্পোরেশন ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। সিনেমাটি অ্যাকশন, আবেগ এবং ভক্তদের জন্য আকর্ষণীয় সংলাপে ভরপুর। এছাড়াও, এতে পারিবারিক বন্ধন, বন্ধুত্ব এবং আত্মত্যাগের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে, যা সুপারস্টারের নিজস্ব ভঙ্গিতে একটি শক্তিশালী সামাজিক বার্তা বহন করে।

‘লিও’: অন্ধকার অতীত নিয়ে এক পরিবারের গল্প

বিজয় অভিনীত ‘লিও’ সিনেমার গল্প হিমাচলের একটি শান্ত শহরে বসবাসকারী এক সাধারণ পরিবার প্রধানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। কিন্তু তার অতীতের গোপন রহস্যগুলো যখন আবার সামনে আসতে শুরু করে, তখন সে সহিংসতা ও মাফিয়া জগতে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়। গল্পের মূল মোড় হলো, “পার্থিবান” নামের এই শান্তশিষ্ট মানুষটি আসলে “লিও দাস” নামের এক ভয়ংকর অতীতের অধিকারী। এই সিনেমাটিতে পারিবারিক স্নেহ, মানসিক যন্ত্রণা এবং পুরনো পাপের ছায়ার মতো বিষয়গুলোকে একটি রোমাঞ্চকর চিত্রনাট্যের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।

‘কুলি’-এর বক্স অফিস যাত্রা ও পঞ্চম দিনের আয়

সোমবারের ব্যবসায়িক মন্দা সত্ত্বেও রজনীকান্তের ‘কুলি’ অবশেষে ভারতে ২০০ কোটি রুপির মাইলফলক ছুঁয়েছে। সুপারস্টারের ইন্ডাস্ট্রিতে ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সিনেমাটি ১৪ আগস্ট মুক্তি পায় এবং দীর্ঘ সপ্তাহান্তের ছুটি উপভোগ করে। প্রথম দিনে রেকর্ড পরিমাণ আয় এবং তিন দিনে ১৫০ কোটি রুপি আয় করার পর সিনেমাটির গতি কিছুটা কমে যায়। রবিবার পর্যন্ত ভারতে সিনেমাটির মোট আয় ছিল ১৯৪.২৫ কোটি রুপি।

বক্স অফিস ট্র্যাকার স্যাকনিল্ক-এর প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, লোকেশ কানাগরাজ পরিচালিত ‘কুলি’ সোমবার সন্ধ্যা ৬:৩০ পর্যন্ত মাত্র ৫.৬ কোটি রুপি আয় করেছে, যা আগের দিনগুলোর তুলনায় অনেকটাই কম। মুক্তির প্রথম দিনের তুলনায় সিনেমাটির আয় এরই মধ্যে প্রায় ৫৫% কমে গেছে এবং সোমবারের এই কম আয় সেই ব্যবধান আরও বাড়াবে। এই আয়সহ ‘কুলি’-এর পাঁচ দিনের মোট আয় দাঁড়িয়েছে ২০০.১ কোটি রুপি। রাতের শোগুলোর চূড়ান্ত হিসাব এলে এই সংখ্যায় কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে।

বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসের হিসাবে, ‘কুলি’ ২০২৫ সালের সবচেয়ে বড় ভারতীয় ওপেনার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। মুক্তির প্রথম চার দিনে বিশ্বজুড়ে সিনেমাটি মোট ৩৮৫ কোটি রুপি আয় করেছে। এর মধ্যে ভারতের বাইরে থেকে এসেছে ১৫৪.৫ কোটি রুপি এবং ভারত থেকে মোট আয় (গ্রস) ২৩০.৫ কোটি রুপি। স্যাকনিল্ক আরও জানিয়েছে যে ‘কুলি’ প্রথম তামিল সিনেমা হিসেবে মুক্তির প্রথম দিনেই বিশ্বব্যাপী ১৫০ কোটি রুপি আয় করে একটি নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে।